তৃতীয় বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত দেশগুলোতে শিশুরা অবহেলিত। পরিবারে বাবা-মা, ভাইবোনদের স্নেহ-ভালোবাসার বাইরে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে তাদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয় কমই। শিশুরাই সমাজের সৌন্দর্য। শিশুরা আছে বলেই সমাজ স্নেহ-ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। আমরা সব সময় মানবাধিকারের কথা বলি, কিন্তু শিশুদের যে নিজস্ব কিছু আলাদা অধিকার রয়েছে, সে সম্পর্কে সমাজ ও রাষ্ট্র নীরব। আশির দশকে ইউনিসেফের উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব অব জার্নালিস্ট ফর চিলড্রেনস রাইটস’ সংক্ষেপে আইসিজিসিআর। তার প্রধান কার্যালয় ছিল রোমে। ইউনিসেফের উদ্যোগে পৃথিবীর কয়েকটি দেশে তার শাখা গঠিত হয়েছিল। ঢাকার জাতিসংঘের অফিসের উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ চ্যাপ্টার। কচি-কাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই নির্বাচিত হয়েছিলেন চেয়ারম্যান, আমি সেক্রেটারি জেনারেল। বিজ্ঞানবিষয়ক খ্যাতিমান লেখক আবদুল্লাহ আলমুতী শরফুদ্দীনসহ ১০-১২ জন ছিলেন নির্বাহী কমিটির সদস্য। আমরা সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কিছু কাজ করেছিলাম। কিন্তু ইউনিসেফ থেকে বা রোমের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়ায় সংগঠনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। দাদাভাই মারা যাওয়ার পর একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইন আছে। আইন থাকাটাই বড় কথা নয়, আইনের কঠোর প্রয়োগ চাই। দরিদ্র শিশুরা ওই আইনের সুবিধা খুব কমই পায়। আমার দাবি, শিশুদের ব্যাপারে প্রত্যেক দলের একটি করে সেল থাকতে হবে। তারা শিশুদের অধিকার হরণ ও নির্যাতন প্রভৃতি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। শিশুরা যেসব বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকে, তা দূর করতে প্রত্যেক দলের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে। তাছাড়া ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোনো রকম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বা নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করা যাবে না। যদি কোনো দল করে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে প্রশাসনের দিক থেকে। ভালো ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সে দায়িত্ব রাষ্ট্র যেমন নেবে, তেমনি দলগুলোকেও নিতে হবে।